Tuesday, July 9, 2024

খেজুরের আশ্চর্যজনক উপকার! যা আমরা অনেকে জানি না

 হজরত ঈসা(আ:) এর মা হজরত মরিয়ম (আ:) কে ঈসা (আ:) এর জন্মের পরে আল্লাহ  যে খাবার খাওয়ার জন্য হুকুম করেছেন তা অবশ্যই অত্যন্ত পুষ্টিকর। 


আল্লাহ তায়ালা হজরত মরিয়ম (আ:) কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘ওই খেজুর গাছের কাণ্ডটি ধরে নিজের দিকে ঝাকুনি দাও। তা থেকে সদ্য পাকা খেজুর তোমার সামনে ঝরে পড়বে। এরপর তা খাও।’ (সুরা মরিয়াম: ২৫)


খেজুর খাওয়ার মধ্যে আল্লাহ  অপরিসীম উপকারিতা রেখেছেন। নবী করিম  (সা:)-এর প্রিয় ফল ছিল খেজুর। সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি- যে ব্যক্তি ভোরে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোন বিষ ও যাদু-টোনা তার ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)




৪১৯১-[৩৩] ’হজরত আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী করিম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদীনার উচ্চভূমির ’আজওয়াহ্ খেজুরের মধ্যে রোগের নিরাময় রয়েছে। আর প্রথম ভোরে তা (খাওয়া) বিষের প্রতিষেধক। (মুসলিম)//



খেজুর দিয়ে ইফতার করার ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, নবী করিম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে, সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা তাতে বরকত ও কল্যাণ রয়েছে’ (মেশকাত : ১৮৯৩)।



অন্য হাদিসে আছে, আনাস বিন মালেক (রা:) বর্ণনা করেছেন, ‘নবী করিম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তা হলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত, তা হলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’ (তিরমিজি : ৬৩২)



মাওয়ারদি (রহ:) বলেন, ‘স্ত্রীলোক যখন প্রসবে অসুবিধার সম্মুখীন হয়, তখন খেজুর অপেক্ষা উপকারী বস্তু আর নেই। কারণ এটি শরীরের রক্ত বৃদ্ধি করে এবং কোমর ও বিভিন্ন অঙ্গের জোড়া মজবুত করে।’



খেজুর অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্য হওয়ায় নবী করিম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম   তা খেতে পছন্দ করতেন। আব্দুল্লাহ ইবন জাফর (রা:) বলেন, ‘আমি মহানবী (সা.)-কে তাজা পাকা খেজুর শসার সঙ্গে মিলিয়ে খেতে দেখেছি।’ (বুখারি)



আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী করিম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাজা খেজুরের সঙ্গে তরমুজ খেতেন।’ (বুখারি)//



খেজুরের ক্রিয়া গরম এবং শসা ও তরমুজের ক্রিয়া ঠান্ডা। খেজুরের সঙ্গে শসা অথবা তরমুজ মিলিয়ে খেলে খেজুর তাদের ঠান্ডা দূর করে এক প্রকার শক্তি তৈরি করে, যা রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীর তরতাজা করে।



খেজুর যেমনি সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর ফল, খেজুরের পুষ্টিগুণ প্রচুর। খেজুরে প্রাকৃতিক সুগারের পরিমাণ এত বেশি থাকে যে, এক কামড়েই অনেকটা এনার্জি পাওয়া যায়। এর মধ্যে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, গ্লুকোজ, ম্যাগনেশিয়াম ও সুক্রোজ থাকে।



১) খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়কে মজবুত করে। সেই সঙ্গে মাড়ির স্বাস্থ্যও সুরক্ষিত রাখে।



২)  বয়সের ছাপ প্রথমে আমাদের ত্বকেই ধরা পড়ে।  নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে বাঁচায়।  ত্বকের বলি রেখা নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া ত্বকের ফ্যাকাশে ভাব ও হরমোনের সমস্যা কমাতে খেজুর কার্যকর ভুমিকা পালন করে। 



৩) রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে খেজুর কাজ করে, যকৃতের সংক্রমণে খেজুর উপকারী। এ ছাড়া গলাব্যথা, বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি এবং ঠান্ডায় খেজুর উপকারী। খেজুর অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়ায় বেশ উপকারী। ভেজানো খেজুর খেলে বিষক্রিয়ায় দ্রুত উপশম হয়। এ ছাড়া নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাসে বৃদ্ধি পায় শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও।(amela)



৪) চোখের রোগের চিকিৎসায় খেজুর উপকারী,  খেজুরে  বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন,  যেমন: বি১, বি২, বি৩,  বি৫, ভিটামিন এ১ এবং ভিটামিন সি আছে যা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে রাতকানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাই বেশি বয়সে চোখের সমস্যার সম্মুখীন হতে না চাইলে খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।//



৫)  শরীরে আয়রনের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে খেজুর। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এবং চিনির বিকল্প হিসেবে কাজ করে খেজুর। 



৬)  বয়স বাড়ার সঙ্গে বাড়ে হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও। এই ঝুঁকি কমাতে পারে খেজুর। খেজুরে রয়েছে পটাশিয়াম, যা হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধ করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুর শরীরের খারাপ ধরনের কোলেস্টেরল কমায় (এলডিএল) এবং ভালো কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।



৭) শরীরের হজমশক্তি বাড়ায় খেজুর,  অন্ত্রের কৃমি ও ক্ষতিকারক পরজীবী প্রতিরোধে খেজুর বেশ সহায়ক। খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ, যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।



৮) খেজুরে  প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। এই আয়রন শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে শরীরে রক্তাল্পতা দূর করে।  



৯) মানুষের বয়সের সঙ্গে দেখা দেয় নানা ধরনের পেশির জটিলতা। আর খেজুর প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায়  পেশির জটিলতা দূর করে,  আমাদের পেশি ভালো রাখতে সহায়তা করে।  //



১০) খেজুরে  প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে খেজুর খুব দ্রুত শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং আমাদের দেহের কর্মশক্তি বাড়ায়, বয়সের কারণে যে  ক্লান্তি আসে তা দূর করে।  খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকায় কয়েকটা খেজুর খেলেই দুর্বলতা কেটে যায়। 



১১)  খেজুর নানা ভিটামিনে পরিপূর্ণ থাকায় এটি মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার গতিকে বৃদ্ধি করে,সেই সঙ্গে আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। যেই সব ছাত্রছাত্রীরা  নিয়মিত খেজুর খায় তাদের দক্ষতা অন্যদের তুলনায় ভালো থাকে। 



১৩) শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে খেজুর কার্যকর ভূমিকা রাখে।



১৪)  হৃদরোগ, ক্ষুধামন্দা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে খেজুর বিশেষ উপকারী।



১৫) খেজুর ক্ষুধা নিবারণে দ্রুত কাজ করে।পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি এবং অ্যাজমায় উপকারী। 



খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান থাকায় নানান ধরনের রোগ প্রতিরোধ  করার ক্ষমতা আছে। পাশাপাশি এর পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটায়। তাই আমাদের  প্রতিদিন তিন-চারটা করে খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করা ভালো। কিন্তু খেজুরটা ভেজালমুক্ত হওয়া ভালো, কারন খেজুরে যাতে পোকা না ধরে এইজন্য অনেক অসাধু ব্যবসায়ীরা খেজুরে ক্ষতিকারক প্রেষ্টিসাইড ব্যবহার করে।  আবার খেজুর যাতে চকচকে দেখায় এইজন্য অনেকে তেল লাগায়। 


আজ এই পর্যন্তই!


ভিডিওটিতে একটি  লাইক দিলে নতুন ভিডিও বানানোর জন্য আমাদের উৎসাহ বাড়বে  এবং এইরকম ভিডিও আরো  পেতে চাইলে চ্যানেলটি subscribe করে আমাদের সাথে থাকুন। আল্লাহ হাফেজ



No comments:

Post a Comment

আজ আমরা জানব কি কি কাজ করলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি চলে যায়।   জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান মন্ত্রণালয়ে...