প্রশ্নকারীকে ধন্যবাদ। আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে দেখলাম সারা পৃথিবীতে যেখানেই মুসলমানরা গিয়েছে সেখানে স্থানীয় মানুষদের উন্নতি আর অগ্রগতির চিন্তা করেছে তাদের সমৃদ্ধির জন্য কাজ করেছে। স্পেনে মুসলিমরা যাওয়ার আগে তাদের আর্থসামাজিক অবস্থ কেমন ছিল আর তাদের শাসনামলে কত উন্নতি ঘটেছিল আমার এই ব্যাপারে একটা লেখা নিচে দেয়া হল। যাহোক এত কথা বলার উদ্দেশ্য হল একটা সমৃদ্ধ জাতিকে স্পেনিয়রা কিভাবে পৈশাচিকভাবে শেষ করে দিয়েছে তার কাহিনী নিচে আসতেছে।
নিষ্ঠুর স্প্যানিশ অভিযাত্রীরা বারবার আঘাত হেনেছিল ইনকাদের স্বর্নভুমিতে, পৃথিবীর অন্যতম একটা সভ্যতাকে যারা মিশরীয়দের মত অনেক উন্নত কলাকৌশল জানত তাদের দেশে লুটপাট, হত্যাসহ আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল ইনকা সভ্যতার সমৃদ্ধ শহরগুলো। মূলত সেই ধ্বংসযজ্ঞের কারণে ইনকা সম্পর্কে খুব অল্পই তথ্য-প্রমাণ মিলেছে।
ইনকা সভ্যতা ধ্বংসের জন্য দায়ী করা হয় স্প্যানিশ ফ্রানসিসকো পিজারোকে। পিজারো স্পেন থেকে ১৫০২ খ্রিষ্টাব্দে হিসপানিওয়ালা (বর্তমানকালে হাইতি ও ডোমেনিকান রিপাবলিক) দ্বীপে আসেন। ১৫০৯ খ্রিষ্টাব্দে কলোম্বিয়া অভিযানে অংশ নেন। এরপর নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি পানামা পৌঁছান। এখানে এসে তিনি দক্ষিণ আমেরিকার স্বর্ণসমৃদ্ধ ভূখণ্ডের কথা জানতে পারে। ১৫২০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে পরপর দুটো অভিযান চালান। এই সময় তিনি ইনকাদের সাম্রাজ্যের প্রবেশ করেন। তিনি ষড়যন্ত্র করে কিছু ইনকা জাতির লোককে বন্দী করেন এবং সেই সাথে প্রচুর সোনাদানা নিয়ে স্পেনে ফিরে আসেন।
১৫২৭ সালে ইনকা সাম্রাজ্যে এক মহামারী দেখা দেয়। সেই মহামারিতে ইনকা রাজা ও তার উত্তরসূরি ছেলে মারা যান। রাজার অন্য দুই ছেলের মধ্যে সিংহাসনের লড়াইয়ে দেশজুড়ে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এদের একজন অ্যাটাহুয়ালপা জিতে গেলেও খুব বেশি দিন টিকতে পারেননি। স্প্যানিশ ফ্রানসিসকো পিজারো কুট কলাকৌশল এর মাধ্যমে দুই দলকে সমর্থন দিয়ে যুদ্ধকে দীর্ঘস্থায়ী রুপ দিয়ে তাদের শক্তি নিঃশেষ করে দেয়।
এরপর পিজারো স্পেনের তৎকালীন রাজা পঞ্চম চার্লস-এর কাছে পেরু দখল এবং সেখানকার শাসক হওয়ার অনুমতি চান। রাজা পঞ্চম চার্লস পিজারোকে এই অভিযানে অনুমতি দেন । ১৫৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বর্তমান পেরুতে পৌঁছান। ১৭৭ জন সৈন্য ও ৬২টি ঘোড়া নিয়ে কাজামারকা শহরে যাত্রা করেন। সে সময়ের ইনকা সম্রাট তখন আটাহুয়ালপা কাজামারকা শহরে অবস্থান করছিলেন। পিজারো কাজামারকা শহরের কাছে এসে ইনকা সম্রাটের কাছে স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা অনুমতি প্রার্থনা করেন। সম্রাট তাঁকে ঘোরাফেরার অনুমতি দিলে, ১৫৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই নভেম্বর তিনি শহরে প্রবেশ করেন। ১৬ই নভেম্বর তিনি শহরের একটি খোলা জায়গায় আটাহুয়ালপা ও ইনকা অভিজাতদের ভোজে নিমন্ত্রণ করেন। ইনকা সম্রাট এবং অভিজাত শ্রেণির লোকেরা সরল বিশ্বাসে প্রায় নিরস্ত্র অবস্থায় নিমন্ত্রণ রক্ষা করার জন্য আসেন।পরে স্প্যানিশ সৈন্যরা তাঁদের ঘিরে ফেলেন এবং সম্রাট ছাড়া সকল অতিথিদেরকে হত্যা করে। কতবড় বিশ্বাসঘাতকতা?
এরপর পিজারো সম্রাটের মুক্তি পণ হিসেবে এক ঘর ভর্তি সোনা আর দুটি ঘর ভর্তি রূপা দাবী করেন। রাজ্যের অভিজাতরা পিজারোর সেই দাবী মেনে নেওয়ার পরও সম্রাটকে হত্যা করেন। সম্রাটের মৃত্যুর পর ইনকাদের প্রতিরোধ করার মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে, পিজারো ইনকার রাজধানী কুজকো দখল করে নেয়। ইনকা সাম্রাজ্যে স্প্যানিশদের দখলে আসার পর, এরা সমগ্র অঞ্চল জুড়ে হত্যা, লুণ্ঠনের তাণ্ডব চালায়। ইনকাদেরকে দাস হিসেবে বিক্রয়ের কার্যক্রম চালায়। পুরো পেরু অঞ্চল দখলে আসার পর, ১৫৩৫ খ্রিষ্টাব্দে পিজারো লিমা নামে একটি নতুন শহর প্রতিষ্ঠা করে এবং এই শহরে রাজধানী স্থাপন করে, পেরু শাসন করা শুরু করে।
এই সময় কৌশলী পিজারো, সম্রাট আটাহুয়ালপা-কে হত্যা করলেও, তার আরেক ভাই মানকো কাপাককে সিংহাসনে বসায়। ইতিমধ্যে লুটেরা স্প্যানিশদের মধ্যে স্বর্ণরৌপ্যের ভাগাভাগি নিয়ে হাঙ্গামা বাধে। মানকো তাদের এই হানাহানির সুযোগ নিয়ে পালিয়ে গিয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ভিলকা বাম্বায় আশ্রয় নেয় এবং নতুন রাজধানী পত্তন করে।
মানকো কাপাক ভিলকা বাম্বায় থেকে স্প্যানিশদের বিরুদ্ধে গুপ্ত যুদ্ধ পরিচালনা করা শুরু করেন। দীর্ঘদিন ধরে এই যুদ্ধ চলার পরও স্প্যানিশরা ভিলকা বাম্বার অবস্থানই জানতে পারে নি। ১৫৭২ খ্রিষ্টাব্দে স্প্যানীয়রা ভিলকা বাম্বার অবস্থান খুজেঁ পায় এবং মানকো-কে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। মূলত এই পরাজয়ের মধ্য দিয়ে সর্বশেষ ইনকা সম্রাট ও তার সাম্রাজ্য বিলুপ্ত হয়ে যায়। এবং ইনকারা দাস দাসী হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে অনেককে দাস-দাসী হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয় ইউরোপে।
১৫৪১ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রানসিসকো পিজারো ৬৬ বছর বয়সে লিমায় নিজ প্রাসাদে খুন হন। তার খারাপ পরিনতি হয় কিন্তু তার লোভ আর নিষ্ঠুরতার বলি হয় একটা প্রাচীন সাম্রাজ্য।
ছবিসুত্র এবংং তথ্যসূত্রঃইন্টারনেট (গুগল)
No comments:
Post a Comment