Sunday, June 2, 2024

মঙ্গা কি? বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মঙ্গাপীড়িত এলাকা বলা হয় কেন?

দরিদ্র্যতা ও ক্ষুধার অবস্থাকে প্রকাশ করার জন্য মঙ্গা শব্দটা ব্যবহার করা হয়।'মঙ্গা’ শব্দটির উদ্ভব হয়েছে উত্তরাঞ্চলে।  মঙ্গা বলতে উত্তর অঞ্চলের বাৎসরিক দারিদ্র্যতা ও ক্ষুধার অবস্থাকে বোঝায়। এটি "মরা কার্তিক" নামেও পরিচিত , যার অর্থ "মৃত্যু এবং দুর্যোগের মাস"।


উত্তরাঞ্চলের কৃষিভিত্তিক মানুষের জীবনের সঙ্গে এখনো জড়িয়ে আছে মঙ্গা শব্দটি। এখন বাহ্যিকভাবে উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা নেই, মঙ্গা হয় না। কিন্তু মঙ্গার স্মৃতি তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়, আবার কখন মঙ্গারূপী  দারিদ্র্যতা তাদের সামনে এসে হাজির হয়।


বৃহত্তর  রংপুর অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ  এর বেশি কৃষিশ্রমিক। যাদের নিজেদের জায়গাজমি নেই। অন্যের জমিতে কাজ করে যে পারিশ্রমিক পান, তা দিয়েই পরিবারের ক্ষুুধা নিবারণ হয়। 



মঙ্গা বছরের যে সময়টিতে হতো  তা হলো প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ  আমন ফসল রোপণ করার পরে বাংলা মাস হিসেবে সময়টা হলো বছরের আশ্বিন-কার্তিক -অগ্রাহায়ন মাস। মঙ্গার সময়  প্রত্যেক বছর উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২০ থেকে ২৪  লাখ মানুষ , এক বেলা খেয়ে বা না খেয়েই বেঁচে থাকেন। এ সময়  উত্তর অঞ্চলের মানুষ খাবারের অভাবে তাদের গ্রাম ছেড়ে ঢাকা, কুমিল্লা এবং দক্ষিন পচশিমঞ্চলে কাজের  অনুসন্ধান করত। যারা অন্য কোথাও কাজের জন্য যেত না তাদেরকে  নিজেদের এলাকায় বেকার বসে থাকতে হত।  কৃষি শ্রমিক বা কৃষিজীবী মানুষগুলো  ঘরে সঞ্চিত খাদ্য শেষ হয়ে এলে তারা মহাজন, জোতদার কিংবা দাদন ব্যবসায়ীর দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াত শস্য কিংবা নগদ অর্থ কর্জের জন্য। মহাজন, জোতদার বা দাদন ব্যবসায়ীরাও এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করত কিভাবে লাভবান হওয়া যায়।  একবার মহাজন, জোতদার বা দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সুবিধা গ্রহণ করলে দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক শ্রম বা ফসলের ভাগ দিয়ে ঋণ শোধ করতে হতো। ফলে এই কৃষিনির্ভর দরিদ্র মানুষেরা ক্রমেই দুর্বিষহ অবস্থায় পতিত হতো। উত্তরাঞ্চলে এই নীরব দুর্ভিক্ষই ‘মঙ্গা’ নামে খ্যাতি পায়।


 উত্তরাঞ্চল বাংলাদেশের শস্যভাণ্ডার হিসেবে  পরিচিত এখানেই সবচেয়ে বেশি চাল ও সজ্বি উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়। যমুনা নদীর উপর সেতু হওয়ার পরে সবাই মনে করেছিল  উত্তরাঞ্চলের মানুষেরা অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি পাবে। এই সেতু তাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে কিন্তু সেখানে  উৎপাদিত শস্য ও সবজির  সুযোগ নিয়ে যায় মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা অনেক কম মূল্যে উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত শস্য ও সবজি কিনে চড়া দামে ঢাকাসহ বড় বড় শহরের পাইকারি আড়তগুলোতে বিক্রি করে।

আসলে  যেই সেতু  তাদের অর্থনৈতিকজীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে বলে মনে করা হয়েছিল তা এখন পর্যন্ত আশানুরূপ তেমন কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।

উত্তর অঞ্চলে ইপিজেড হওয়ার কারণে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, এবং তারা আগে  তাদের এলাকার বাইরে চাকরি করতে যেতে ভয় পেত বা অনীহা প্রকাশ করত এখন তারা অনেকেই  ঢাকায় গিয়ে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি  করছে। সেই সাথে  যোগাযোগ ব্যবস্থারও তুলনামূলক  উন্নতি হয়েছে, আগে যেখানে উত্তরাঞ্চলের জমিগুলোতে  সাধারণত সারা বছর একটা ফসলের আবাদ হতো  এখন একের অধিক শস্য  এবং সবজির চাষ হয়।  


তারপরও উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা পরিস্থিতির ওপর পরিচালিত গবেষণায় বলা হচ্ছে, কয়েক দশকের সরকারি ও বেসরকারি নানা ধরণের কর্মসূচি সত্ত্বেও সার্বিক পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি উত্তরাঞ্চলের মানুষের।


আজ এই পর্যন্তই!


ভিডিওটি ভালো লাগলে লাইক দিন এবং এইরকম ভিডিও আরো  পেতে চাইলে চ্যানেলটি subscribe করে আমাদের সাথে থাকুন। আল্লাহ হাফেজ। 


No comments:

Post a Comment

আজ আমরা জানব কি কি কাজ করলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি চলে যায়।   জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান মন্ত্রণালয়ে...