Wednesday, June 12, 2024

বিষাক্ত গরুতে সয়লাব গরুর হাট। বিষাক্ত গরুগুলো কিভাবে চিনবেন?

কোরবানি খুব সন্নিকটে ৪,৫ দিনের মত বাকি আছে । সবাই-ই চায় ভালো দেশি গরু কিনতে যা কেমিক্যাল ছাড়া হবে,বিষাক্ত হবে না এবং কোরবানির গোশত খাবার পরে আমাদের কিডনি, লিভার ইত্যাদি নষ্ট হবে না। কিন্তু কোরবানির গরুর ক্রেতাদেরকে ধোকা দেবার জন্য শত শত অসাধু  ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত বিষাক্ত ইনজেকশন ও ট্যাবলেট নিয়ে, যা গরুকে খাইয়ে ওজন ২০ থেকে ২৫ কেজি বাড়িয়ে ক্রেতাদের সামনে উপস্থাপন করে    কিভাবে বেশি লাভ করা যায় সেই ধান্দা। বিষে ভরা সেই গোস্ত খাওয়ার পরে আমাদের শরীরের ভিতর খারাপ কিছু রোগের উপসর্গ সৃষ্টি হবে যা হয়তো আগে ছিলই না। 



  আমাদের দেশে কোরবানির কিছুদিন  আগে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু প্রবেশ করে যাদের মধ্যে অনেক গরু হাড্ডিসার থাকে। এছাড়া আমাদের দেশের কিছু দুর্বল গরু এর সাথে কম স্বাস্থ্যবান কিছু গরুকে বিষাক্ত ইনজেকশন ও ট্যাবলেট খাইয়ে ওজন বাড়ানো হয়। 


অতি লাভের  আশায় আসাধু ব্যবসায়ীরা কিছু  ভারতীয়  ওষুধ ডেক্সামেথাসন বা ডেকাসন, বেটামেথাসন ও পেরিঅ্যাকটিন জাতীয় স্টেরয়েড ব্যবহার করে ভারতীয় গরু এবং সাথে দেশি দুর্বল গরু মোটাতাজা করে থাকেন।কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করার জন্য গরুর মাংসপেশীতে ভারতীয় ডেক্সামেথাসন ইনজেকশন দেয়া  হয় এবং খাওয়ানো হয় স্টেরয়েড গ্রুপের বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট।


ক্ষতিকর এ সব বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে কোরবানির অনুপযোগী অল্পবয়স্ক, অস্বাস্থ্যবান ও চিকন গরুকে অতি দ্রুত স্বাস্থ্যবান করে তোলা হয়।এই সমস্থ ওষুধ শুধু পশুর জন্যই ক্ষতিকর নয়, বরং মানবদেহের জন্যও স্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 



ক্ষতিকর এ সব বিষাক্ত ওষুধ  প্রয়োগ করার ফলে গরুর উরু অনেক বেশি মাংসল মনে হয়। অতিরিক্ত হরমোন প্রয়োগ করার ফলে গরুর  পুরো শরীরে পানি জমে মোটা দেখায়।স্টেরয়েড গ্রুপের ট্যাবলেট খাওয়ালে গরুর প্রস্র্রাব বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রস্র্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে শরীরে পানি জমতে শুরু করে। যার ফলে হাড্ডিসার গরুও মোটাতাজা দেখায়।

ওষুধের ক্রিয়াক্ষমতা শেষ হয়ে গেলে একটা  নির্দিষ্ট সময়  পরে  গরু  মারা যেতে পারে এবং  শরীরের পানি কমে গিয়ে গরুর স্বাস্থ্য আবার পুর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে।  অর্থাৎ পানি জমে যে স্বাস্থ্যবান দেখাইতেছিল তা কমে যায়। এরকম গরুর গোস্ত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ানক  ক্ষতিকর।


হরমোন বা স্টেরয়েড গ্রুপের ট্যাবলেট  গরুর রক্তের সঙ্গে মিশে গরুর কিডনি, ফুসফুস, যকৃতে ছড়িয়ে পড়ে সেগুলোতে পচন ধরিয়ে দেয়। একই সঙ্গে গরুর শরীরে পানি জমে যায়। স্টেরয়েড মিশে যায় গরুর গোশতের সঙ্গেও। ক্ষতিকারক বিষাক্ত ওষুধ খাওয়ানো হলে গরুর গোশত রান্নার পরও তার অবশেষ গরুর গোশতের মধ্যে রয়ে যায়।পরে এসব গরুর গোশত খেলে মানুষের দেহেও ওই স্টেরয়েড ঢুকে পড়ে এবং একই প্রক্রিয়ায় মানুষের কিডনি দ্রুত নষ্ট করে দেয়।  মানুষের বিপাক ক্রিয়া দুর্বল হয়ে যায়।  রক্ত বিষাক্ত করে। শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সিরাজগঞ্জের সদর, শাহজাদপুর, তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া; বগুড়ার শেরপুর উপজেলার রাণীগ্রাম বাজারের ওষুধ ও মুদি দোকানেও এসব ট্যাবলেট  বিক্রি করা হয়। দোকানগুলোতে এসব বড়ির গোপন নাম ‘লাল-সাদা ট্যাবলেট’।কোরবানি উপলক্ষে শুধু শাহজাদপুরেই হাজার হাজার গরু মোটাতাজা করা হয়েছে।


বিষাক্ত গরুগুলো কিভাবে চিনবেন? 


কোরবানির পশুর হাটের অস্বাভাবিক রকমের মোটাতাজা, বিশালদেহী গরুগুলোই সবসময়  নজর কাড়ে মানুষের। ক্ষতিকর এ সব বিষাক্ত ওষুধ  প্রয়োগ করার ফলে গরু খুব শান্ত, নীরব ও নির্জীব হয়। আসলে গরু খুব অসুস্থ থাকে যার কারণে  বাহির থেকে বুঝা যায় না এবং গরু ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। খাবারও খেতে চায় না। আঙুল দিয়ে গরুর শরীরে চাপ দিলে আঙ্গুল  ভিতরে দেবে যাবে। কারণ বাইরে থেকে গোশত মনে হলেও আসলে  গোশতের সঙ্গে ব্যাপক পরিমাণে পানি থাকে। 


কৃত্রিম উপায়ে মোটা বানানো এসব গরু নির্জীব থাকার ফলে সেইসব গরুকে  চটপটে করতে বিভিন্ন  ট্যাবলেট, টনিক আর উদ্দীপক উপাদান মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। 


গরুর মুখে অতিরিক্ত লালা বা ফেনা লেগে থাকাও কৃত্রিম উপায়ে গরুকে মোটা করার আরেকটি লক্ষণ।


গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস দেখেও গরুকে বিষাক্ত ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে কি না-তা নিশ্চিত করা সম্ভব। ট্যাবলেট খাওয়ানো হলে গরু দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলে। গরুকে খুব ক্লান্ত দেখা যায় আর সারাক্ষণ হাঁপাতে থাকে। 



এজন্য বেশি বা অতিরিক্ত মোটাতাজা নাদুস নুদুস গরুর পরিবর্তে দেশি কম স্বাস্থ্যের হাড্ডিসার গরুই অনেক ভালো। হয়তো একসময় সে রকম গরুর চাহিদা বাড়বে। আর আমাদের অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা ইনেজেকসন দিয়ে  আর ট্যাবলেট খাইয়ে নাদুস নুদুস গরূকে হালকা-পাতলা বানিয়ে ফেলবে।


আজ এই পর্যন্তই!


ভিডিওটিতে একটি লাইক দিয়ে আমাদের উৎসাহ দিন এবং এইরকম ভিডিও আরো  পেতে চাইলে চ্যানেলটি subscribe করে আমাদের সাথে থাকুন। আল্লাহ হাফেজ। 


No comments:

Post a Comment

আজ আমরা জানব কি কি কাজ করলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি চলে যায়।   জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান মন্ত্রণালয়ে...