Monday, March 18, 2024

গোলাপি সোনা বা রোজ গোল্ড কি? কিভাবে তৈরি হয়? কিভাবে চিনব গোলাপি সোনা?

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী রোমান্টিক এবং আধুনিক মেয়েদের ও মায়েদের কাছে রোজ গোল্ড বা গোলাপি সোনা খুব জনপ্রিয়। এই সোনার গহনা সহজে  উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলেন না,  দীর্ঘ সময়ের জন্য এর দীপ্তি এবং সৌন্দর্য বজায় রাখে।


যাহোক স্বর্ণ ব্যবহারের কিছু ইতিহাস আলোচনা করা যাক :


মানুষের স্বর্ণ ব্যবহারের ইতিহাস ৭ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো । ১৯৭০ সালে বুলগেরিয়ার এক কবরস্থানে কবর খনন  করার সময় সেখানে  সোনার একটি আংটি এবং নেকলেস পাওয়া যায়। গবেষকরা গবেষণা করে দেখেন যে ওই স্বর্ণের অলংকারের বয়স খ্রিস্টপূর্ব ৪২০০ থেকে ৪৬০০ বছরের আগের যা মিশরীয় এবং রোমান  সাম্রাজ্য শুরু হওয়ার কয়েকশো বছর আগের ছিল। এ থেকে বুঝা যায় যে মানুষ কত আগে থেকে  সোনা ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিল। বর্তমান জামানায়ও সোনা কিনে রাখা কে উত্তম বিনিয়োগ মনে বলে মনে করা হয় যার দাম দিন দিন বাড়তেই থাকে যাকে ইংরেজিতে বলে heaven of investment. এক সপ্তাহ আগেই  চীনের ব্যাপারে একটা খবর এরকম ছিল  যে, "  চীনের তরুণদের মধ্যে সোনার তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখে তাঁদের মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণদানা বা গোল্ড বিনস কিনে রাখার প্রবণতা বাড়ছে। মুখে খাওয়া বড়ির মতো স্বর্ণের এসব দানার ওজন এক গ্রাম করে। এগুলোর দাম স্থানীয় মুদ্রায় ৪০০ থেকে ৬০০ ইউয়ান, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ হাজার  টাকা থেকে ৯ হাজার  টাকা"। সবাই স্বর্ণকে ভবিষ্যতের জন্য একটা নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করে।  কিন্তু আপনি যদি মুসলমান হন অবশ্যই আপনাকে এসব গহনার যাকাত দিতে হবে তা না হলে আখেরাতে  অনেক সমস্যা আছে । আর পরিপূর্ণ ভাবে  যাকাত দেয়ার দ্বারা সোনা  কমবেনা বরঞ্চ পবিত্র হবে এবং  চুরি হয়ে যাওয়া ও নষ্ট হওয়া থেকে আল্লাহতালা হেফাজত করবেন।//




সোনা একটি ঘন,  নরম এবং নমনীয় মূল্যবান ধাতু যার উজ্জ্বল হলুদ রংঙের আভা রয়েছে। সোনা তাপ এবং বিদ্যুত সুপরিবাহী। খাঁটি সোনা এতই  নরম এবং  নমনীয় হয় যে এক ট্রয় আউন্স বা ৩১.১ গ্রাম সোনা দিয়ে পাতলা শীট বানিয়ে  ১৫৬ বর্গফুট জায়গা সম্পুর্ন  ঢেকে দেয়া যাবে। 


 স্বর্ণ বিভিন্ন রঙের হতে পারে যেমন হলুদ, লাল, গোলাপী,  সাদা ইত্যাদি,সবই খাদ ধাতুর কারসাজি । সোনা, রঙ এবং উজ্জ্বলতায় আকর্ষণীয়,তুলনা মূলকভাবে বিশুদ্ধ আকারে প্রকৃতিতে পাওয়া যায়।কিন্তু  খাদ যোগ করার পরে  সোনার রং এবং বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পরিবর্তন আসে। //


কিভাবে গোলাপী স্বর্ণ তৈরি হয়? 


রোজ গোল্ড বা গোলাপি সোনার প্রথম প্রচলন হয় রাশিয়ায় ১৮০০ শতকের শেষের দিকে তখন তার নাম ছিল 'রাশিয়ান গোল্ড' এবং বিংশ শতাব্দীতে এসে এই সোনা বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করে তখন তার নাম হয় রোজ গোল্ড বা  গোলাপি সোনা।


প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত হলুদ সোনাকে গোলাপের সুন্দর আভা দেয়ার জন্য তাতে খাদ হিসেবে  কপার বা তামা যোগ করা হয়।খাঁটি তামা দেখতে কিছুটা লালচে গোলাপি হয়। ৭৫% খাঁটি সোনার সাথে ২৫% তামা যোগ করে গোলাপি সোনা তৈরি করা হয়।   যদি বেশি গোলাপি হয়ে যায় তখন এর সাথে কিছু রুপা যোগ করে সামঞ্জস্য বজায় রাখা হয়। অর্থাৎ গোলাপি সোনা বা রোজ গোল্ড হলো ৭৫%  খাঁটি সোনা এবং ২৫% তামা যোগ করা একটা মিশ্রণ। এই পার্সেন্টেজের স্বর্ণকে ১৮ ক্যারেট সোনাও বলা হয়।খাঁটি সোনার সাথে কপার বা তামার পার্সেন্টেজ যত যোগ করা হবে ততই  এর মধ্যে গোলাপি বা লাল আভা সৃষ্টি হবে । //


গোলাপি সোনার সুবিধা :


গোলাপি সোনার সুবিধা হল এটি কখনই তার আসল রঙ হারিয়ে ফেলে না, স্ক্র্যাচ পরে না এবং সহজে বিকৃতি হয় না। রোমান্টিক এবং আধুনিক মেয়েরা ও মায়েরা এই ধরনের গোলাপি  সোনা খুঁজে থাকেন।  এই সোনা বর্তমানে  মেয়েদের মাঝে বিশ্বব্যাপী খুব জনপ্রিয় হইতেছে। এই সোনার গহনা সহজে  উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলেন না,  দীর্ঘ সময়ের জন্য এর দীপ্তি এবং সৌন্দর্য বজায় রাখে।//


   রোজ গোল্ড বা গোলাপি সোনার গহনার কিভাবে যত্ন নিব? 


গোলাপি সোনা বা রোজ গোল্ড এর গহনার  বিশেষ কোন যত্নের প্রয়োজন নেই, শুধুমাত্র মাঝে মাঝে পরিষ্কার এবং পালিশ করে নিবেন। 


আরো কিছু উপায় হলো:


রোজ গোল্ড  বা গোলাপি সোনার গহনা গুলোকে দাগ পড়া থেকে অন্য গহনার সাথে একসাথে না রেখে আলাদা রাখা যেতে পারে এর দ্বারা  দাগ পড়া থেকে  বা স্ক্র্যাচ  পড়া থেকে রক্ষা পাবে। 


এ গোলাপি সোনা বা রোজ গোল্ড এর গায়ে যদি কোন রকমের ময়লা বা দাগ লেগে থাকে সেগুলা  মসৃণ কাপড়  দিয়ে মুছে ফেলতে হবে এবং যে ধরনের রাসায়নিক উপাদান এই গহনার সাথে বিক্রিয়া  করতে পারে সেই সমস্ত রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার থেকে নিজেকে  দূরে  রাখতে হবে। 


 ক্লোরিন যুক্ত সুইমিং পুল বা খারাপ আবহাওয়ায় অর্থাৎ খুব আদ্র, অত্যন্ত গরম বা অনেক বেশি বৃষ্টিপাত এরকম অবস্থায় রোজ গোল্ড এর গহনা পরে না বের হওয়া  ভালো এছাড়া  ব্যায়াম  করার সময় বা বাগানে কাজ করার সময় এই গহনা ব্যবহার না করা ভালো।//


আমরা কিভাবে চিনব রোজ গোল্ড?


প্রথম যে পদ্ধতিটির কথা বলবো তা হলো বিশ্বস্বীকৃত হলমার্কিং পদ্ধতি, সারা বিশ্বে ১৪ এবং ১৮ ক্যারেটের সোনাই হলো rose gold.অর্থাৎ আপনি যদি এরকম স্বর্ণ পান যে স্বর্ণের গহনার গায়ে  ১৪ বা ১৮ ক্যারেট লেখা আছে সেগুলো rose gold কারণ ১৪ বা ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ তৈরি করতে যে যে অনুপাতে সোনা এবং খাদ মিশানো হয় তাই রোজ গোল্ড।  আমেরিকায় রোজ গোল্ড হিসেবে 14  ক্যারাটের স্বর্ণ ব্যবহার হয় আর ইউরোপের ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণকে রোজগোল্ড বলে। এখন  আপনাকে যদি কোন  স্বর্ণকার ২৪ ক্যারেট লেখা কোন স্বর্ণকে দেখিয়ে  বলে যে এটাই রোজ গোল্ড তাহলে অবশ্যই বুঝে নিবেন যে ওই গহনাটি রোজ গোল্ডের না কেননা রোজ গোল্ড  কখনোই  ২৪ ক্যারেট এর হবে না,  রোজ গোল্ড হবে ১৪ বা  ১৮ ক্যারেটের যাতে সোনার পরিমাণ ২৪ ক্যারেটের চেয়ে  কম হবে এবং ভেজাল হিসেবে বেশি খাদ মিশ্রিত থাকবে । 


২৪ ক্যারেটের সোনা দেখতে সম্পুর্ন হলুদ হবে আর গোলাপি সোনা বা রোজ গোল্ড দেখতে কিছুটা লালের মধ্যে গোলাপি আভা থাকবে। পাশাপাশি ধরলে বুঝতে পারবেন। একটা হলুদ আর একটা লালচে হবে যা  হলুদ বা গোলাপি আভাযুক্ত।


আজ এই পর্যন্তই!


ভিডিওটি ভালো লাগলে লাইক দিন এবং এইরকম ভিডিও আরো  পেতে চাইলে চ্যানেলটি subscribe করে আমাদের সাথে থাকুন। আল্লাহ হাফেজ। 



No comments:

Post a Comment

আজ আমরা জানব কি কি কাজ করলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি চলে যায়।   জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান মন্ত্রণালয়ে...