২০২৪ সালের প্রথম সূর্যগ্রহণ হবে ৮ এপ্রিল। ৮ এপ্রিল যে গ্রহণটি হতে চলেছে তা হবে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ।
হঠাৎ সূর্যের আলো নিভে যাওয়া বা নিস্তেজ হয়ে যাওয়া বা দিনের বেলা রাতের মত অন্ধকার হয়ে যাওয়া ও কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী সূর্যের আলো হারানোর মাধ্যমে যে অবস্থা সৃষ্টি হয় তাকেই সূর্য গ্রহণ বলে । //
সূর্য গ্রহণ কেন হয়?
পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদ সব সময় পরিভ্রমণরত। পৃথিবীতে কেন্দ্র করে চাঁদ ঘুরতে থাকা অবস্থায় কোন সময় চাঁদ যদি পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে অবস্থান করে তখন সূর্য থেকে আলো আসা পৃথিবীতে বাধাগ্রস্ত হয় আর চাঁদের ছায়া গিয়ে পৃথিবীর উপর পরে। চাঁদ পৃথিবী থেকে অনেক ছোট হওয়ার কারণে সে পৃথিবীর সব জায়গাকে ঢেকে ফেলতে পারে না এবং আলো আসাকে সম্পূর্ণরূপে বাধা দিতে পারে না যার কারনে একই সাথে সমস্ত পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় না। আবার অন্যভাবেও বলা যায় যে চাঁদ সূর্য থেকেও অনেক ছোট হওয়ার কারণে সে সম্পূর্ণভাবে সূর্যকে ঢেকে ফেলতে পারে না বা আলোকে বাধা দিতে পারে না যার ফলে সূর্যকে আলো বিচ্ছুরিত অবস্থায় দেখা যায়।
আর যখন পৃথিবী এবং চাঁদ একটি সমান্তরাল রেখার মধ্যে অবস্থান করে এবং চাঁদ সম্পূর্ণভাবে সূর্যকে ঢেকে ফেলে এই ঘটনাকে বলে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ।২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল যে সূর্যগ্রহণ হবে তা হবে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ।
চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে যাওয়াও কখনো সেকেন্ডের জন্য আবার কখনও কয়েক মিনিটের জন্য আকাশ এতই অন্ধকার হয়ে যায় যে মনে হয় যেন সেটা রাতের আকাশ।//
চিলের জ্যোতির্বিজ্ঞানী বলেন তত্ত্বগতভাবে, পূর্ণগ্রাস সূর্য গ্রহণ সর্বোচ্চ ৭ মিনিট ৪০ সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
চাঁদ সূর্যকে কতটুকু অন্ধকার করবে এর উপরে নির্ভর করেই সূর্যগ্রহণকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় ।
সূর্যগ্রহণ সাধারণত তিন রকম হতে পারে। আংশিক বা খণ্ডগ্রাস সূর্যগ্রহণ, বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ এবং পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ।
২০২৪ সালের প্রথম সূর্যগ্রহণ হবে ৮ এপ্রিল যা দেখা যাবে উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরু এবং আফ্রিকায় থেকে।
৮ এপ্রিলের এই সূর্যগ্রহণ মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অন্ধকার নেমে আসবে। ৫৪ বছর পর এমন সূর্যগ্রহণ হওয়ায় নাসার বিজ্ঞানীরা এইবারের সূর্যগ্রহণকে ‘বিশেষ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এর আগে ১৯৭০ সালে এমন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল, আবার হওয়ার সম্ভাবনা ২০৭৮ সালে।
মেক্সিকোতে ২০২৪ সালের ৮ এপ্রিলের সূর্যগ্রহণ দীর্ঘতম সময় ধরে দেখা যাবে। এই সময় হতে পারে ৪ মিনিট এবং ৩০ সেকেন্ড। //
সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে যেই ধরনের কুসংস্কার আমাদের সমাজে প্রচলিত :
১) অনেকেই মনে করে সূর্যগ্রহনের সময় ভ্রমণ করলে তা আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে কারণ তাদের ধারণা এই সময় সূর্য থেকে খারাপ রশ্মি নির্গত হয়।
বিজ্ঞানীদের মতে, গ্রহণের সময় সূর্য থেকে আলাদা কোনো ক্ষতিকর রশ্মি নিঃসরণ হয় না, যার ফলে আলাদাভাবে কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
২) রান্না না করা, খাবার না খাওয়া:
এরকম একটি কুসংস্কার আমাদের সমাজে অনেক আগে থেকেই প্রচলিত আছে যে, সূর্যগ্রহণের সময় কোনো ধরনের খাবার বা পানীয় গ্রহণ করা বা রান্না করা উভয়টিই অমঙ্গলজনক এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
।
৩)এই ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী নারীরা ঘরের বাইরে বের হলে গর্ভের সন্তানের শরীরের বিশেষ ধরনের ক্ষতি হতে পারে যেমন বিকলঙ্গতা, শরীরে জন্মদাগ সৃষ্টি এবং হৃদপিণ্ড ছিদ্র হওয়া । বিজ্ঞানীরা এমন ধারণা ভিত্তিহীন বলেছেন।
৪) এরকম কুসংস্কার আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে সূর্য গ্রহণের পরে ত্বককে ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব থেকে বাঁচাতে অবশ্যই গোসল করতে হবে। বিজ্ঞানীরা এমন ধারণাও ভিত্তিহীন বলেছেন। //
হিন্দু ধর্মে যে কাহিনী প্রচলিত আছে
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে― রাহু দানব গোপনে অমৃতপান করতে থাকলে সূর্য ও চাঁদ তাকে চিনতে পেরে অন্যান্য দেবতাদের জানিয়ে দেয়। এই সময় বিষ্ণু এসে এঁর দুই বাহু ও মাথা কেটে দেন। কিছুটা অমৃত পান করায় এই দানব ছিন্নমস্তক হয়ে অমরত্ব লাভ করেন। এরপর থেকে সুযোগ পেলেই রাহু দানব সূর্য ও চাঁদকে গ্রাস করার জন্য অগ্রসর হয়। কিছুটা গ্রাস করতে সক্ষম হলেও তার কর্তিত দেহ থেকে সূর্য ও চাঁদ বেরিয়ে আসে। রাহুর দানবেরএই গ্রাসকালীন সময়ে গ্রহণ অনুষ্ঠি হয়। বিজ্ঞানের যুগে এর কোন ভিত্তি নেই। //
সূর্যগ্রহণ দেখার সময় যে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে :
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এর তথ্য মতে সূর্যগ্রহণ দেখার সময় আমাদের যে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে , খালি চোখে দেখা যাবে না, সূর্যগ্রহণের সময় খালি চোখে সূর্যের দিকে তাকানো উচিত নয়, কারণ খালি চোখে দেখলে চোখ খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এমনকী অন্ধত্ব হওয়ারও ঝুঁকি থাকে। তাই, সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য টেলিস্কোপ থাকলে খুব সুবিধা এছাড়া উপযুক্ত ফিল্টার যেমন কালো পলিমার, অ্যালুমিনাইজড মাইলার বা ওয়েল্ডিং চশমা ব্যবহার করা যায়।
সূর্যগ্রহণ এর সময়ে নবী করিম (সা:) এর আমল কি ছিল?
No comments:
Post a Comment